রসুলাল্লাহ (আঃ) জীবনে একবার মাত্র হজ পালন করিয়াছিলেন। মক্কা শহরকে চির বিদায় জ্ঞাপন করিয়া তিনি জন্মস্...
রসুলাল্লাহ (আঃ) জীবনে একবার মাত্র হজ পালন করিয়াছিলেন। মক্কা শহরকে চির বিদায় জ্ঞাপন করিয়া তিনি জন্মস্থান ত্যাগ করিলেন। এইজন্য ইহাকে “বিদায় হজ” বলা হয় এবং তাঁহার দেওয়া এই ভাষণকে “বিদায় ভাষণ” বলা হয়, যেহেতু ইহা ছিল জন্মভূমির প্রতি শেষ ভাষণ।মক্কায় অবস্থিত সকলকে বিদায় সম্ভাষণ করিয়া নিজে এহরামের পোশাক না ছাড়িয়াই মদিনার পথে রওয়ানা হইলেন। প্রায় সোয়া লক্ষ লোক তাঁহার সহযাত্রী ছিলেন। পথে ১৮ই জিলহজ তারিখে যখন তিনি “গাদিরে খুম” নামক জায়গায় উপস্থিত হইলেন তখন এই আয়াত নাজেল হইল :-ুহে রসুল, আপনার রব হইতে যাহা নাজেল করা হইয়াছে তাহা পৌঁছাইয়া দিন। আর যদি তাহা না করেন তাহা হইলে তাঁহার (আল্লাহর) রেসালত পৌঁছাইয়া দেওয়া হইল না। আল্লাহ আপনাকে মানবম-লী হইতে লইয়া আসিবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফের দলকে হেদায়েত করেন না (৫ঃ৬৭)। ইহা কোরানের সব শেষের আগের আয়াত। This verse of the Quran is the last but one according to chronology of time. শেষ কথাটির প্রকৃত অনুবাদ হইল : আল্লাহ আপনাকে মনুষ্য হইতে (সরাইয়া) তাঁহার সঙ্গে লাগাইয়া লইতেছেন বা লইবেন। ইহাতে বলা হইল : হে রসুল, যে কথা আলীর মাওলাইয়াত ঘোষণা করার বিষয়ে নাজেল করা হইয়াছিল তাহা এখন পৌঁছাইয়া দিন। আর তাহা যদি না করেন তবে আল্লাহর রেসালত মানবম-লীর নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া হয় না, কারণ শীঘ্রই আল্লাহ আপনাকে জনম-লী হইতে তাঁহার গভীর সান্নিধ্যে টানিয়া লইয়া যাইতেছেন; অর্থাৎ আপনার পার্থিব কর্মজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিতেছে। এমতাবস্থায় যদি নবুয়তের কার্যাবলীর এন্তেজাম করার যোগ্য প্রতিনিধি নিয়োগ করিয়া জনগণের কাছে তাহাকে তুলিয়া না দেন তাহা হইলে আল্লাহর রেসালত জনগণের নিকট পৌঁছাইয়া দেওয়া হইল না। ‘রেসালত’ অর্থ প্রতিনিধিত্ব। নবী বিদায় লইতেছেন। নবী আল্লাহর প্রতিনিধি। আলীকে (আঃ) আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করার উপযুক্ত করিয়া গড়িয়া তোলা হইয়াছে। নবীর পরে রেসালতের কাজে আলীই (আঃ) হইলেন তাঁহার একমাত্র যোগ্য প্রতিনিধি। আল্লাহর প্রতিনিধি হিসাবে আলীকে (আঃ) জনম-লীতে রসুলের পরে তাঁহার স্থলাভিষিক্ত করার নির্দেশক সংবাদ নাজেল করা হইয়াছিল এর কিছুকাল আগেই। কিন্তু রসুলাল্লাহ (আঃ) তাহা তখন প্রচার করা স্থগিত রাখিয়াছিলেন বিশেষ কোন একটি কারণে। এ নির্দেশক সংবাদ নাজেল হওয়ার সময় উহা প্রকাশ না করিয়া বিরাট জনতার মধ্যে আদেশ প্রাপ্ত হইয়া বিশেষ পরিবেশ এবং উপযুক্ত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করিয়াছিলেন। ইহার কারণ, তিনি বেশ জানিতেন আলীর (আঃ) এই মাওলাইয়াত বা প্রতিনিধিত্ব হিংসার বশবর্তী হইয়া লোকেরা অস্বীকার করিবে এবং আলীর (আঃ) বংশধরের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র চলিতে থাকিবে যাহার ফলে ধর্ম বিনষ্ট হইয়া যাইবে। এইজন্য তিনি ঐ পরিস্থিতিতে নাজেল করা সংবাদটি জনগণের নিকট না পৌঁছাইয়া উহাকে কার্যকরী করার জন্য আদেশ দানের অপেক্ষায় রহিলেন। যাত্রাপথে গাদিরে খুম নামক জায়গায় উহা কার্যকরী করার জন্য আল্লাহতা’লা পুনরায় আদেশ দান করিলেন। রসুলের (আঃ) এই ভাবের উপর আল্লাহর যে নির্দেশ হইয়াছিল তাহার উপর টীকা করিতে যাইয়া তফসীরে কাশশাফ লিখিয়াছেন, “হজসে যব তোম ফারেগ হো তব্ আলীকো মোকাররার কার দো।”